মো: সাকিব চৌধুরী রংপুরঃ আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য ১৪ লাখ ১২ হাজারের কিছু বেশি পশুর চাহিদা রয়েছে রংপুর বিভাগের আট জেলায়। কোরবানি উপলক্ষে প্রস্তুত করা হয়েছে ১৯ লাখ ৮০ হাজার পশু। এতে চাহিদার তুলনায় প্রায় ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোরবানির পশু বেশি রয়েছে। স্থানীয় খামারি ও পশু ব্যবসায়ীরা এবার কোরবানির বাজারে পশুর ভালো দাম পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
সোমবার (১৯ মে) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় বিভাগের আট জেলায় ১৪ লাখ ১২ হাজারের বেশি কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভাগের ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ জন ছোট-বড় খামারির মাধ্যমে ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৯০টি গরু, মহিষ, ছাগল, উট, দুম্বা ও ভেড়াসহ কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছেন খামারি ও গৃহস্থরা। যা এই বিভাগের মোট চাহিদার চেয়ে প্রায় ৫ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি। এর মধ্যে উট এবং দুম্বা শতাধিকের বেশি রয়েছে।
বিভাগের আট জেলার মধ্যে –
(১) রংপুরে কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৭৫২টি। সেখানে প্রস্তত করা হয়েছে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩১২টি। চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬১টি পশু।
(২) গাইবান্ধা জেলায় ১ লাখ ২৬ হাজার ৩০৫টি পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তত করা হয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৭৭টি। এ জেলায় চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৬৯ হাজার ৯৭২টি পশু।
(৩) কুড়িগ্রাম জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৮৪০টি কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে সেখানে প্রস্তত করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৪৮৬টি পশু। এ জেলায় উদ্বৃত্ত রয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৬৪৬টি পশু।
(৪) নীলফামারীতে প্রাণীর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ১৬৬টি পশুর। সেখানে প্রস্তত করা হয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ১৫৭টি। এই জেলায় চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৬৫ হাজার ৯৫১টি পশু।
(৫) লালমনিরহাট জেলায় চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৭টি পশুর। সেখানে প্রস্তত করা হয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৬৩১টি। এ জেলায় চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৯০ হাজার ৮৫৪টি পশু।
(৬) দিনাজপুরে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৬৪৬টি কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৮৫টি পশু প্রস্তত করা হয়েছে। এই জেলায় চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৬৯ হাজার ৮৩৯টি পশু।
(৭) ঠাকুরগাঁও জেলায় ৭৫ হাজার ৩৬১টি কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তত করা হয়েছে ৯০ হাজার ৮৮৬টি। এই জেলায় চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ১৫ হাজার ৫২৫টি পশু।
(৮) পঞ্চগড় জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৩০০টির। সেখানে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫৬টি পশু প্রস্তত করা হয়েছে। এই জেলায় চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৯ হাজার ৮৫৬টি পশু।
রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এম. এ. সাঈদ আকন্দ জানান, জেলার ২৫ হাজার খামারির মাধ্যমে বাজারে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩২৩টি গরু এবং ২ লাখ ৮ হাজার ৭০০টি ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১ লাখ ৩৯ হাজার গবাদিপশু দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা যাবে।
পশু খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে খামারিরা কিছুটা উদ্বিগ্ন হলেও ঈদের বাজারে ভালো দামের আশায় খামারিরা শেষ সময়ের পরিচর্যায় ব্যস্ত। অনেকে খামার থেকেই বিক্রি শুরু করেছেন, আবার কেউ কেউ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রির পথ বেছে নিচ্ছেন।
রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল হাই সরকার জানান, বিভাগের আট জেলায় মোট ২৯৫টি কোরবানির পশুর হাট চালু করা হচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতা ও খামারিদের জন্য এসব হাটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও সহযোগিতার ব্যবস্থা রাখা হবে।
রংপুর ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান মিলন বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহা ঘিরে কোরবানির জন্য রংপুর বিভাগে পর্যাপ্ত গরু ও ছাগল রয়েছে। এ কারণে বাইরে থেকে গরু-ছাগল আমদানি করতে হবে না। বরং এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত পশু দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সীমান্ত দিয়ে অবৈধ গরু চোরাচালান রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের।